মহানগর প্রতিনিধি:
দেশে তৃতীয় বারের মতো ফিটাস ইন ফিটু শিশু জন্ম হয়েছে। বিরল এ ঘটনাটি ঘটেছে গাজীপুর সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের বিকেবাড়ি গ্রামে। গাজীপুরে একটি শিশুর শরীরের মধ্যে আরেকটি শিশুর অস্তিত্ব নিয়ে ৬ জুন স্থানীয় মনিপুর বাজারের আল মদিনা হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশন করে শিশুটির জন্ম হয়।। ওই গ্রামের গার্মেন্টস কর্মী দরিদ্র ইমরান হোসেন সবুজ ও মরিয়ম আক্তার দম্পতির ঘরে গত জুন মাসের ৬ তারিখে সিজারিয়ান অপারেশন মাশ্যমে শিশুটির জন্ম হয়। শনিবার গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সার্জন ডাঃ শঙ্কর চন্দ্র দাসের নেতৃত্বে কয়েকজন সার্জন সহ একটি টিম দীর্ঘ দুই ঘন্টা অস্ত্রোপচার করে শিশুটির শরীরে পায়ুপথের পিছনে কোমরের সাথে সংযুক্ত একত্রে থাকা ওই শিশুটিকে আলাদা করতে সক্ষম হয়েছে। যে শিশুটির দেহ থেকে অন্য একটি শিশুকে আলাদা করা হয়েছে ওই শিশুটি সুস্থ রয়েছে বলে জানিয়েছেন অপারেশনের সাথে জড়িত হাসপাতালের সার্জনরা।
গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট ডাক্তাররা জানান, একটি শিশুর দেহে আরেকটি শিশুর অবস্থানের মত এ ধরনের ঘটনা বিরল। এটি একটি জন্মগত সমস্যা যাহা সচরাচর ঘটে না। মেডিকেল বা ডাক্তারি পরিভাষায় এটা কে ফিটাস ইন ফিটু শিশু বলা হয়। সাধারণত প্রতি ৫ লক্ষ শিশুর জন্য এ ধরনের একটি শিশু পাওয়া যেতে পারে। সারা বিশ্বজুড়ে এরকম ঘটনা ঘটেছে দুই শতেরও কম।
একসাথে এ ধরনের জমজ দুই শিশুকে প্যারাসাইটিক টুইন বলা হয়। এদের মধ্যে ফিটাস ইন ফিটু শিশুটি পূর্ণাঙ্গভাবে জন্ম না নিলেও শিশুর মধ্যে জীবনের অস্তিত্ব থাকে। শনিবার হাসপাতালে অবস্থানরত শিশুটির পিতা ইমরান হোসেন সবুজ ও তার মা মরিয়ম আক্তারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গর্ভকালীন সময়ে তারা বিষয়টি বুঝতে পারেননি। সে সময় তারা স্থানীয় ক্লিনিকে গিয়ে আলট্রাসনোগ্রাম করালে তাদেরকে বলা হয় মেয়ে সন্তান জন্ম নিবে। কিন্তু গত ৬ জুন স্থানীয় মনিপুর বাজারের আল মদিনা হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশন করে শিশুটির জন্ম হয়। তখন তারা এ ঘটনাটি দেখতে পান । দেখে প্রথমে কিছুটা বিচলিত হলেও পরবর্তীতে একজন শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। ডাক্তার তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
শিশুটির পিতা ইমরান শিশুটির অপারেশন করতে অনেক টাকা লাগবে মনে করে তার এক আত্মীয়ের পরামর্শে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডাক্তার শংকর চন্দ্র দাসের সাথে দেখা করে শিশুটি সার্বিক অবস্থা ও তাদের পারিবারিক অবস্থার কথা জানান। তখন ডাক্তার শংকর চন্দ্র দাস শিশুটি দেখে নিজ উদ্যোগে হাসপাতালের অন্যান্য সার্জনদের সাথে পরামর্শ করে এই শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেন এবং এখানেই তার অপারেশনের যাবতীয় ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেন। হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা প্রদান এবং অবজারভেশন করে শনিবার অপারেশন করে ফিটাস ইন ফিটু শিশুকে আলাদা করা হবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সে অনুযায়ী হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার সহ অন্যান্য সবকিছু প্রস্তুত করে শনিবার সকাল সাড়ে ৯ টায় তার অস্ত্রোপচার শুরু করা হয় এবং সাড়ে ১১টায় সফলভাবে শেষ হয়। অস্ত্রোপচারে ডাঃ শঙ্কর চন্দ্র দাসের সাথে হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ও শিশু সার্জারি বিভাগের সার্জন খাজা হাবিব সেলিম, সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার শামসুল হুদা, সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার মনিরুল ইসলাম, ডাক্তার মইনুল হোসেন চৌধুরী সহ আরো ১২ জন ডাক্তার, নার্স এবং ওটি বয় অংশ নেন।
অপারেশনের নেতৃত্বে থাকা ডাঃ শঙ্কর চন্দ্র দাস ফিটাস ইন ফিটু শিশুটি সম্পর্কে বলেন, এই শিশুটির অবস্থান ছিল মূল শিশুটির পায়ুপথের পিছনে কোমরের সাথে সংযুক্ত। এর ব্রেন ছিলনা এবং মেরুদন্ড ছিল না। তবে একটি পা ছিল বড় আরেকটি পা ছিল ছোট আকারের। বেঁচে থাকার জন্য সুস্থ বাচ্চাটির দেহ থেকে রক্তনালীর মাধ্যমে খাদ্য সংগ্রহ করে এতদিন বেঁচে ছিল শিশুটি।
ডাঃ শংকর চন্দ্র দাস আরো বলেন, আমাদের হাসপাতাল এমনকি বাংলাদেশে এ ঘটনাটি একটি বিরল ঘটনা। এর আগে একটি শিশুর মধ্যে আরেকটি শিশুর অপারেশন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও সিলেট মেডিকেল কলেজে হয়েছিল। তাই আমরা আমাদের হাসপাতালের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও এ ধরনের একটি জটিল অপারেশন করতে আগ্রহী হই। আমরা সফলভাবে অপারেশনটি করতে সক্ষম হয়েছি।
শিশুটির বাবা সবুজ সফলভাবে অপারেশন করার জন্য সংশ্লিষ্ট ডাক্তারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন আমি একজন দরিদ্র মানুষ টাকা পয়সা তেমন নেই। তাই আমার দ্বারা এ ধরনের অপারেশন ঢাকায় কোন হসপিটালে করানো সম্ভব ছিল না। ডাক্তার শংকর স্যার যদি নিজে উদ্যোগ না নিতেন, তাহলে আমার জন্য অনেক সমস্যা হতো। তাই আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।