কাজের পরিবেশ, মান এবং সেবা গ্রহিতাদের সাথে আচরণের ধরন জানতে ছদ্মবেশে অফিস বা বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শন এই যুগে খুব একটা দেখা না গেলেও সম্প্রতি ঘটেছে এমনি এক ঘটনা। কোথায় ঘটল এমন ঘটনা, কে এমন ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়ালেন, কি দেখলেন তিনি। এই কয়টি লাইন পড়ে আপনার মনে হতে পারে দেড় হাজার বছর পূর্বে খোলাফায়ে রাশিদীন হযরত আবু বকর (রাঃ) বা হয়রত ওমর (রাঃ) সেই বীরত্বগাথা শাসন আমলের কথা। তবে সম্প্রতি এমনি একটি ঘটনা ঘটেছে যশোরে। মাদারীপুর থেকে বদলী হয়ে যশোর জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে চেয়ারে বসার আগে ছদ্মবেশে ঘুরে পুলিশের হালহকিকত, সেবার মান ও সাধারণ মানুষ সেবার পরিবর্তে হয়রানি হচ্ছে কি না? জানার জন্য লাল গালিচা ও ফুলের তোড়ায় অভিবাদন গ্রহন না করে ঘুরে বেড়িয়েছেন শহরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত পুলিশের নিয়ন্ত্রনাধীন অফিস গুলোতে। চেষ্টা করেছেন নিজেকে সাধারণ মানুষের কাতারে দাড় করিয়ে ভূক্তভোগী ও অসহায়দের অসহায়ত্ব অনুভব করার । সাদা টিশার্ট ও কালো প্যান্ট পরা এক ব্যক্তি নীল রঙের বাইসাইকেলে চড়ে শহরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত পুলিশের নিয়ন্ত্রনাধীন অফিস গুলোতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ছদ্মবেশে। ঘুরে বেড়ানোর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। কখনো থানায়, কখনো পুলিশ ফাঁড়িতে, কখনো জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। বাইসাইকেলে চড়া ব্যক্তিকে দেখতে সাধারণ ব্যক্তির মতো মনে হলেও তিনি ততটা সাধারণ মানুষ নন, তিনি যশোরের নতুন পুলিশ সুপার (এসপি) মাসুদ আলম। নতুন পুলিশ সুপার শুরুতে ব্যতিক্রম তদারকি করে সবার নজর কেড়েছেন। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে।
গত মঙ্গলবার (১০ জুলাই,২০২৪) ভোরে বাইসাইকেল নিয়ে জেলা শহরে পুলিশের বিভিন্ন দপ্তরে যান পুলিশ সুপার। বাইসাইকেল চালিয়ে মাসুদ আলম প্রথমে জেলা প্রশাসকের বাংলোয় যান। বাংলোর গার্ড তাঁকে জেলা প্রশাসকের অনুমতি ছাড়া ঢুকতে দেননি। পরে তিনি সেখান থেকে চলে আসেন জেল রোড ট্রাফিক অফিসে। এখানে ফটকে কাউকে না পেয়ে তিনি চলে যান চাঁচড়া পুলিশ ফাঁড়িতে। সেখানে পুলিশ ফাঁড়ির ফটকে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন, পরে ফটক ধরে ঝাঁকি দিলেও কেউ ফটক খুলতে আসেননি।
চাঁচড়া পুলিশ ফাঁড়ি থেকে মাসুদ আলম যান কোতোয়ালি মডেল থানায়। সেখানে তিনি পরিচয় গোপন রেখে কোতোয়ালি মডেল থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তার কক্ষে যান। মোবাইল ফোন হারিয়ে গেছে জানিয়ে দায়িত্বরত কর্মকর্তার কাছে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার আগ্রহের কথা জানান। একপর্যায়ে দায়িত্বরত কর্মকর্তা একজনকে দেখিয়ে দিয়ে বলেন, ‘জিডি করতে হলে ৫০০ টাকা লাগবে।’ টাকা না দেওয়ায় এসপি জিডি করতে পারেননি।
মাসুদ আলম বাইসাইকেল চালিয়ে যান জেলার পুলিশ লাইনসে। ফটকে কর্মরত কনস্টেবল তাঁকে ভিতরে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে ছদ্মবেশে থাকা পুলিশ সুপার কনস্টেবলকে বলেন, ‘ব্যারাকে কামাল নামে আমার এক বন্ধু আছে। তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চাই।’ তখন কনস্টেবল গার্ড তাঁকে ভেতরে যাওয়ার অনুমতি দেন। এরপর কনস্টেবলদের ব্যারাকের তৃতীয় তলায় গিয়ে তিনি সবার সঙ্গে খিঁচুড়ি খান এবং অনেকের সঙ্গে আলাপ করেন।
গত বুধবার বিকেলে যশোর জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়েও সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় এসপির ছদ্মবেশে পরিদর্শনের বিষয় উঠে আসে। এ সময় তিনি বিষয়টি স্বীকার করেন। নবাগত পুলিশ সুপারের এমন ব্যতিক্রমী কর্মকাণ্ডকে প্রশংসা করছেন অনেকে। ছদ্মবেশে থাকার ছবি ও তথ্য পোস্ট করছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
যশোর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘। নতুন পুলিশ সুপার শুরুতে ব্যতিক্রম তদারকি করে নজর কেড়েছেন। এতে আমাদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। আমরা চাইব, তাঁর কথা ও শুরুর কাজ শেষ পর্যন্ত অবিচল থাকবে। তাহলে আমরা সন্ত্রাস, হয়রানি ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাব।’
এ বিষয়ে নবাগত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, ‘আমি ছদ্মবেশে গিয়েছি, দেখেছি। অনেক জায়গায় ভালো পেয়েছি, আবার অনেক জায়গায় একটু খারাপ পেয়েছি। খারাপ জায়গাগুলোর ব্যাপারে আমি পদক্ষেপ নেব। পুলিশের বিভিন্ন দপ্তর পরিদর্শনের সময় বড় ধরনের অনিয়ম চোখে পড়েনি এবং আরও খোঁজখবর নিচ্ছি বলে জানান মাসুদ আলম।সাধারণ মানুষ হয়রানি থেকে মুক্তি পাবে এমনটাই আশা করছেন যশোরের সকল শ্রেণীর মানুষ।