আজ
|| ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ১৮ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা শহীদদেরকে কোন দলীয় ভিত্তিতে ভাগ করতে চাই না। এই শহীদরা জাতির সম্পদ, ইজ্জতের চুড়ান্ত সীমায় আমরা তাদের রাখতে চাই, তেখতে চাই। এতে কিন্তু রাস্ট্রের দায়িত্ব আছে। যার লড়াই করে বুকের রক্ত দিয়ে জীবন দিয়ে তাদের সন্তানেরা, তাদের স্বামীরা যাদের বাবারা এ সমাজকে মুক্তি এনে দিয়ে গেছেন এ পরিবারগুলোর প্রতি সরকারকে অবশ্যই তার নৈতিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। জাতিকেও দায়িত্ব পালন করতে হবে। জাতির অংশ হিসেবে আমরা এটকু দায়িত্ব পালনে চেষ্ট করেছি।
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টায় গাজীপুর মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আয়োজনে শহরের রাজবাড়ী মাঠে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহতদের পরিবার সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় জামায়াত আমির এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সভায় ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘যারা এই সমাজের দুশমন তারাই শিল্প ধ্বংস করতে চায়। তারা শ্রমিকদের আবেগকে উসকে দিয়ে রাস্তায় নামায়। তারা বলে, শ্রমিকরা ঘরে বসে বেনিফিট পাবে। কিছু কিছু মালিক আছেন তারা চান শ্রমিকদের ঘাম নয়, পারলে রক্ত চুষে নিতে, এটি অন্যায়। শিল্প যারা বাঁচাবে আপনি তাদের বাঁচতে দিন। আপনি তাদের সম্মান করবেন, তারা সমস্ত শক্তি উজাড় করে আপনাকে সবকিছু বিলিয়ে যাবে। এতে শিল্পের উন্নতি হবে, তাদেরও উন্নতি হবে। আমরা এ রকম বৈষম্যহীন একটা সমাজ চাই। আমরা এমন একটা সমাজ চাই, যেই সমাজে জন্ম নেওয়া প্রতিটি শিশুর চারটি অধিকার (খাদ্য, আশ্রয়, স্বাস্থ্য এবং সুশিক্ষা) সরকার তাকে দিতে বাধ্য থাকবে।
এই দেশ দফায় দফায় সাগর সাগর রক্তের বিনিময়ে বারবার মুক্তির জন্য আহাজারি করেছে– ৪৭, ৭১, আবার ২০২৪ সালে কোনও জাতি তাদের নিজেদের অধিকারের জন্য এত রক্ত দিয়েছে কিনা আমি জানি না।’
সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ক্ষমতায় থেকে জনগণের অর্থে কেনা অস্ত্র ও বুলেট জনগণের বুকে ধরার দুঃসাহস করবে এমন কোনও সন্ত্রাসী আর দেখতে চাই না। পুরো বাংলাদেশকে এক করতে হবে। ১৮ কোটি মানুষের ৩৬ কোটি হাতকে এক করতে হবে। বিশ্বকে জানান দিতে হবে– দেশ এবং জাতির স্বার্থে আমাদের মধ্যে কোনও বিভাজন নেই। যত বিভাজন রেখা তৈরি করা হয়েছিল, সবগুলোকে আমরা পায়ের নিচে ফেলে দিয়েছি।
আর আমরা কাউকে এই জাতিকে বিভক্ত করার সুযোগ করে দেবো না। দলের, ধর্মের ও গোষ্ঠীর ভিত্তিতে আমরা জাতিকে আর ভাগ করার সুযোগ দেবো না। জাতিকে তারাই ভাগ করে, যারা জাতির দুশমন। যারা জাতির বন্ধু, তারা জাতিকে কখনও ভাগ এবং বিভক্ত করতে পারে না। এই ক্ষেত্রে আমরা আপসহীন। এখন থেকে বাংলাদেশের মানুষ কালোকে কালো এবং সাদাকে সাদা বলবে। আমরা চাই এমন একটা দেশ হবে, যেই দেশে বৈষম্য থাকবে না।’
আগামীতে দুর্নীতি ও দুঃশাসনমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে জামায়াত আমির বলেন, ‘আমাদের এমন একটা সমাজ প্রয়োজন যে সমাজে শিক্ষিত মানুষগুলো কলমের খোঁচায় হাজার হাজার কোটি টাকা জাতির কাছ থেকে লুটপাট করবে না। আমরা কোনও শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদকে আদালতের বিচারক হতে দেখতে চাই না। কোনও দুর্বৃত্তকে আদালতের চেয়ারে দেখতে চাই না। একজন সরকারি কর্মকর্তা রাষ্ট্রের সেবক, তিনি দল, গোষ্ঠী বা ব্যক্তির সেবক না। আমরা এমন কোনও কর্মকর্তা-কর্মচারী আগামীতে দেখতে চাই না, যাদের বাধ্য করা হবে রাষ্ট্র, জনগণ বাদ দিয়ে গোষ্ঠীর পূজা করার জন্য। এমন একটা দেশ আমাদের সবার কামনা। সেই দেশটা আমাদেরই গড়তে হবে, ইনশাল্লাহ। এ জন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আন্দোলনে নিহতদের পরিবারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যারা শহীদ হয়েছেন তারা চাকরি পাওয়ার জন্য বা কারও সহযোগিতা পাওয়ার জন্য লড়াই করেননি। তারা আমাদের কাছে মর্যাদার এবং সম্মানের পাত্র। তারা নিঃস্বার্থ লড়াই করেছেন জাতিকে সম্মানিত করার জন্য। জাতির দায়িত্ব এখন তাদের পরিবারকে সম্মানিত করা। এটি করতে হবে, এর বিকল্প নেই। সরকারের কাছে দাবি জানাই, তাদের সঠিক স্বীকৃতিটা যেন দেওয়া হয়। প্রতিটি শহীদ পরিবার থেকে কমপক্ষে একজনকে যেন সরকার সম্মানজনক চাকরির ব্যবস্থা করে। লড়াই করে যারা আহত হয়েছেন, পঙ্গু হয়েছেন তাদেরও যেন সম্মানজনক চাকরি দেওয়া হয়। তারা যেন কারও করুণার পাত্র হয়ে না থাকেন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘আমাদের দেশে মতলববাজরা মালিক এবং শ্রমিকের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধিয়ে রাখে। উদ্যোক্তা এবং মালিক যদি না থাকে শ্রমিকরা কোথায় কাজ করবেন? শিল্প যদি না বাঁচে কর্মসংস্থান কোথায় হবে? আমরা এমন সমাজ চাই, ব্যবসায়ীরা তার জায়গায় বসে ব্যবসা করবেন, কোনও দুর্বৃত্তের যাতে সাহস না হয় তার কাছে চাঁদা চাওয়ার। বাজারে স্বস্তি থাকবে, সহনীয় দ্রব্যমূল্য থাকবে, যাতে প্রতিটি মানুষ তার সামর্থ্য অনুযায়ী স্বস্তির সঙ্গে বসবাস করতে পারেন।’
গাজীপুর মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির অধ্যাপক মুহা. জামাল উদদীনের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ। বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য ড. খলিলুর রহমান, ঢাকা উত্তর অঞ্চল টিমের সদস্য আবুল হাসেম খান, মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন, গাজীপুর জেলা জামায়াতের আমির ড. জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুর মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির মুহাম্মদ খায়রুল হাসান, মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি আবু সাঈদ মোহাম্মদ ফারুক, শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সালাউদ্দিন আইউবী সহ প্রমুখ।
এদিকে জামায়াতের ইসলামীর এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে গাজীপুরে সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বাস, ট্রাক ও পিকআপে করে শতশত নেতাকর্মী শহরের রাজবাড়ি ময়দানে জড়ো হতে থাকেন। বেরা ১১টার আগেই রাজবাড়ি ময়দান হাজার হাজার নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে মতবিনিময় সভাটি বিরাট সমাবেশে রূপ নেয়। এটি ছিল জামায়াতে ইসলামীর স্মরণকালের সবচে বড় সমাবেশ।