গাজীপুরের শ্রীপুরে স্ত্রীর প্রেমিককে হত্যার ঘটনায় আজিজ মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) গাজীপুর পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের কম্পানি কমান্ডার মেজর জুন্নুরাইন বিন আলম তার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
তিনি জানান সোমবার ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার কাঁঠাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যা কথা স্বীকার করে আজিজ জানান, পরকীয়া দেখে স্ত্রীর প্রেমিক আশরাফুল ইসলামকে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেন তিনি। পরে তার (আজিজ) স্ত্রী তাসলিমা আক্তারকেও কোপান।
আজিজ ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার কাঁঠাল ইউনিয়নের রাজাবাড়ী গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে। তিনি গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকা চন্নাপাড়া গ্রামে নিজের কেনা জমিতে বাড়ি করে স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তান নিয়ে থাকতেন। আশরাফুল ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার আসগ্রাম এলাকার ওহাব বিশ্বাসের ছেলে।
তিনি শ্রীপুর পৌর এলাকা চন্নাপাড়ায় স্ত্রী ও দুই বছর বয়সী একমাত্র মেয়েকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থেকে একই এলাকায় ভাড়া ভবনে এসএস ফ্যাশন কারখানা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাসলিমার অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক। ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে।
সোমবার শ্রীপুর পৌর এলাকা চন্নাপাড়া গ্রামে আজিজ মিয়া তার বসতঘরে স্ত্রীর সঙ্গে হাতেনাতে ধরে আশরাফুলকে কুপিয়ে হত্যা করেন আজিজ। পরে তার স্ত্রী তাসলিমা আক্তারকেও এলোপাতাড়ি কোপান। এরপর ঘরের দরজায় তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে যান তিনি। টের পেয়ে আশপাশের মানুষজন তালা ভেঙে মুমূর্ষু অবস্থায় তাসলিমাকে উদ্ধার করে মমেক হাসপাতালে ভর্তি করে।
র্যাবের তথ্য মতে আজিজ মিয়া নির্মাণকাজের ঠিকাদার। প্রায় আট বছর আগে পারিবারিকভাবে তাসলিমার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তাসলিমা ওই এলাকায় এসএস ফ্যাশন কারখানায় চাকরি করতেন। এতে কারখানাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুলের সঙ্গে পরিচয় ও এক পর্যায়ে তা পরকীয়া সম্পর্কে গড়ায়।
র্যাবের কর্মকর্তা জানান, গতকাল সকালে তার বাড়ির পাশে মামুনের বাড়িতে চলা নির্মাণকাজ দেখতে যান আজিজ। সেখান থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে কড়ইতলা এলাকায় আরেকটি নির্মাণকাজ দেখতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্মাণকাজের কিছু সরঞ্জাম ভুল করে ফেলে যাওয়ায় ফের বাড়ি ফেরেন। ঘরে ঢোকার আগেই তার স্ত্রী কারো সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলছেন বলে শুনতে পান তিনি। ওই সময় তার স্ত্রী বলছিলেন, ‘বাসা ফাঁকা, বাচ্চারা স্কুলে। তুমি সাড়ে ১০টায় বাসায় আসো।’ ওই কথা শুনেই তিনি বাড়ির বাইরে নতুন নির্মাণ করা গোসলখানায় লুকিয়ে পড়েন।
সকাল পৌনে ১১টার দিকে আশরাফুল ওই বাড়িতে যান। আশরাফুল ঘরে ঢোকার পর দরজা বন্ধ করে দেন তাসলিমা। পরে টেলিভিশনের ভলিউম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। বাইরে থেকে ঘটনা দেখে আজিজ মিয়া দরজায় কড়া নাড়েন। চিৎকার শুরু করলে তার স্ত্রী দরজা খুলে দেন। ঘরে ঢুকে তিনি ভেতর থেকে তালা দিয়ে দুজনকেই পরকীয়া সম্পর্কের কথা জিজ্ঞাসা করেন। ওই সময় আশরাফুল গত কয়েক মাস থেকে তাদের পরকীয়া চলছে বলে স্বীকার করেন। এরই মধ্যে শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় কারখানার ভেতর তাদের অনৈতিক সম্পর্ক হয়েছিল বলেও স্বীকার করেন।
এতে আজিজ ধারালো বঁটি দিয়ে প্রথমে আশরাফুল ইসলামকে এলোপাতাড়ি কোপান। এক পর্যায়ে গলা কেটে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন। পরে তাসলিমাকেও এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর অবস্থায় ফেলে বাইরে থেকে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে যান তিনি।
র্যাবের কর্মকর্তা জানান, ঘটনার পর আশরাফুলের বাবা ওহাব বিশ্বাস বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় আজিজ মিয়া ছাড়াও হারুন-অর রশিদ (২৮) নামের আরো একজনকে আসামি করা হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের পর র্যাব-১-এর একটি দল ঘটনাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে একই সঙ্গে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ান।
মেজর জুন্নুরাইন বিন আলম জানান, গতকাল সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অবস্থান নিশ্চিত হয়ে র্যাব-১ ও র্যাব-১৪ ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার কাঁঠাল এলাকায় অভিযান চালান। সেখান থেকে আজিজ মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আজিজ মিয়া হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেন। তাকে আজ দুপুরে শ্রীপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, এরই মধ্যে আজিজকে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। পরবর্তী আইনগত প্রক্রিয়া চলছে।