গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী পূর্ব থানার হাজতখানার ভেতরে আপোষের শর্তে বাদী ও আসামীর টাকা লেনদেনের ভিডিও নিয়ে মহানগর পুলিশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত না হলেও দায়িত্বে অবহেলার কারণে দায়িত্বরত কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়াও এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার কারণে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে শোকজ ও বদলী এবং ডিউটি অফিসারকে শোকজ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার তাদের বিরুদ্ধে এ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (অপরাধ-দক্ষিণ) মো: আলমগীর হোসেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, টুটুল সরকার ও মহিউদ্দীনের যৌথভাবে ঠিকাদারি ব্যবসা রয়েছে। টঙ্গীর নৌঘাট ইজারা নিয়ে টাকার লেনদেন নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়। তাদের দুজনের বাড়িই গাজীপুরে। মহিউদ্দীনের অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২৬ অক্টোবর যৌথবাহিনী টুটুলকে আটক করে টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। থানায় আইনী সহায়তা দিতে গিয়ে আটক হন টুটুলের আইনজীবী মো: ইব্রাহিম হোসেন। পরে টুটুলের ব্যবসায়ীক পার্টনার মহিউদ্দীন টুটুলসহ দুই জনের বিরুদ্ধে থানায় একটি চাঁদাবাজী মামলা করেন।
টুটুল আমেরিকান নাগরিক বলে পুলিশ জানিয়েছে। এলাকায় তার অনেক সম্পদ ও প্রভাব রয়েছে। এসব কারণে টুটুল যে কোন উপায়ে থানা থেকে বের হওয়ার জন্য চেষ্টা করে। কিন্তু থানা পুলিশ কোন তদবিরের বিনিময়ে থানা থেকে তাকে ছাড়তে রাজি হয়নি। একারণে টুটুল থানা হাজতে থেকেই মামলার বাদীর সাথে আপোষ মিমাংসায় উপনীত হয়। আপোষের শর্ত হিসাবে হাজতে বসেই টুটুল বাদীতে নগদ ১৯ লাখ টাকা প্রদান করে। পরে আপোষের মাধ্যমে দুই আসামী ওই দিনই জামিনে মুক্ত হয়।
এ ঘটনার কিছুদিন পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, থানার হাজতখানার ভেতরে হলুদ গেঞ্জি ও সাদা প্যান্ট পরে বসে রয়েছেন টুটুল। লোহার শিকের ফাঁক দিয়ে হাজতখানার ভেতর থেকে গুনে গুনে টাকার বান্ডিল হাতবদল করছেন দুই ব্যাক্তির সাথে। ১ হাজার, ৫০০ ও ১০০ টাকার এসব বান্ডিল। হাজতের বাইরে থেকে সেই টাকার বান্ডিল গুনে কালো ও সাদা রঙের দুটি শপিং ব্যাগে রাখছেন আরও দু’জন। পাশে অস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন পোশাক পরিহিত এক কনস্টেবল। এ দৃশ্য গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) টঙ্গী পূর্ব থানার হাজতখানার। টাকা লেনদেনের ৫২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়লে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। প্রথমে ছড়িয়ে পড়ে এটি পুলিশের সাথে লেনদেনের ভিডিও।
কিন্তু অনুসন্ধানে জানা যায়, আসলে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে টিকার লেনদেন হয়েছে মামলার বাদী ও বিবাদীর মধ্যে। হাজতখানার ভেতর থেকে টাকা গুনে গুনে দিচ্ছেন টুটুল সরকার। আর পুলিশের উপস্থিতিতে হাজতখানায় থাকা টুটুলের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন মামলার বাদী আরিফুর রহমান। দুইপক্ষের টাকা লেনেদেনের প্রমাণ রাখার জন্য ভিডিওটি করা হয়।
ভুক্তভোগী আইনজীবী ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ওই দিন ভুল তথ্যে টুটুলকে আটক করে যৌথবাহিনী। টঙ্গী পূর্ব থানায় হস্তান্তর করার পর আইনজীবী হিসেবে সহায়তা দিতে গেলে আমাকেও আটক হতে হয়েছে। আটকের পর চাঁদাবাজির মামলা দেওয়া হয়েছে।
টুটুল সরকার সাংবাদিকদের জানান, আমি হাজত খানায় আটক থাকা অবস্থায় আমার প্রতিপক্ষ আরিফুর রহমান খান ও মহিউদ্দিন আমার কাছ থেকে ১৯ লক্ষ টাকা আদায় করেছে। মহিউদ্দিন বলেন, থানা হাজতখানা থেকে টুটুলের কাছ থেকে ১৯ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়। তাঁর কাছ থেকে ১৬ লাখ টাকা নিয়েছি। তার কাছে আরো অনেক টাকা পাওনা আছে।
এ বিষয়ে উপ পুলিশ কমিশনার (অপরাধ-দক্ষিণ) মো: আলমগীর হোসেন বলেন, টাকা লেনদেনের ঘটনার সাথে পুলিশের কোন সম্পর্ক নেই। কোন পুলিশ সদস্য টাকা নেয়নি। পুলিশের চোঁখ ফাঁকি দিয়ে একটি মামলার বাদী ও বিবাদী নিজেরা আপোষ করে টাকা লেনদেন করেছে। খাবারের কথা বলে হাজত খানায় টাকা নিয়ে গেছে। ঘটনাটি আমাদের নজরে আসার পর যেহেতু থানা হাজতে ঘটনা ঘটেছে, তাই হাজতখানার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কনস্টেবল মুকতাদিরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আসাদুজাজামানকে শোকজ ও গাজীপুর মহানগর পুলিশের উত্তর বিভাগে বদলি করা হয়েছে। আর দায়িত্বে অবহেলার কারণে ঘটনার সময়ের ডিউটি অফিসারকে শোকজ করা হয়েছে।