• November 21, 2024, 3:48 pm
সংবাদ শিরোনাম
প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে পর্যটন নিয়ন্ত্রণে ৬ সদস্যের কমিটি গঠন আয়ারল্যান্ড সিরিজের নারী দল ঘোষণা গাজীপুর পূবাইলে তুলার গুদামে আগুন ৩০ গুদাম পুড়ে ছাই প্রধান উপদেষ্টার তহবিল থেকে ঋণ দেওয়ার নামে টাকা উত্তোলন গ্রেপ্তার চার আজিমপুরে ডাকাতির পর শিশু অপহরণ করে নিয়ে গেছে ডাকাতদল পর্তুগালে বিশ্বের সবচেয়ে বড় তথ্য প্রযুক্তি সম্মেলন ওয়েব সামিট-২০২৪ শুরু শহিদ আবু সাঈদের আত্মত্যাগ ফ্যাসিস্ট সরকার পালাতে বাধ্য হয়েছে: মাহমুদুর রহমান রাজনৈতিক দল “বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি (বিআরপি)” আত্মপ্রকাশ গাজীপুরে হাজত খানায় বাদী বিবাদীর টাকা লেনদেনে কনস্টেবল বরখাস্ত ঠাকুরগাঁওয়ে সন্ধ্যা নামতেই শুরু অনলাইন জুয়ার আসর গাজীপুরে টিএনজেড অ্যাপারেলসের পরিচালক গ্রেফতার, ২দিনের রিমান্ড মঞ্জুর শ্রীপুরে জামানের পরকীয়ার জেরে প্রবাসীর স্ত্রীর আত্মহত্যা জিএমপিতে কমিশনার হিসাবে ড. নাজমুলের যোগদান প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন বাতিল সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার হুমকি : সম্পাদক পরিষদ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এইচএসসির ফল প্রকাশ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সমন্বয়ককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা বাগেরহাটে গাছের সঙ্গে প্রাইভেটকারের ধাক্কায় চালকসহ দুজন নিহত নরসিংদীতে ভারতীয় অবৈধ প্রসাধনী সামগ্রী ও বিভিন্ন পণ্য উদ্ধার আটক ১ পোশাক শ্রমিক হত্যার বিচার দাবিতে বিক্ষোভ  বাগেরহাটে জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে বিএনপির কর্মসূচীতে হামলা

গাজীপুরে শিশুর ভেতর জন্ম আরেক শিশুর, যা বললেন চিকিৎসক

সংবাদদাতা 40 দেখেছেন
মঙ্গলবার, জুলাই ৯, ২০২৪

গাজীপুর প্রতিনিধি ঃ

গাজীপুরে একটি শিশুর শরীরের মধ্যে আরেকটি শিশুর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। বিরল এ ঘটনাটি ঘটেছে গাজীপুর সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের বিকেবাড়ি গ্রামে। ওই গ্রামের দরিদ্র ইমরান হোসেন সবুজ ও মরিয়ম আক্তার দম্পতির ঘরে গত জুন মাসের ৬ তারিখে শিশুটির জন্ম হয়।

শনিবার (৬ জুলাই) গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সার্জনরা শিশুটির শরীরে অস্ত্রোপচার করে একত্রে থাকা ওই শিশুটিকে আলাদা করতে সক্ষম হয়।

হাসপাতালের নবজাতক ও শিশু-কিশোর বিশেষজ্ঞ সার্জন ডাক্তার শঙ্কর চন্দ্র দাসের নেতৃত্বে কয়েকজন সার্জন দীর্ঘ দুই ঘণ্টা চেষ্টা করে শিশু দুইটিকে আলাদা করেছেন। যে শিশুটির দেহ থেকে অন্য একটি শিশুকে আলাদা করা হয়েছে ওই শিশুটি সুস্থ রয়েছে বলে জানিয়েছেন অপারেশনের সাথে জড়িত হাসপাতালের সার্জনরা।

গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট ডাক্তাররা জানান, একটি শিশুর দেহে আরেকটি শিশুর অবস্থানের মতো এ ধরনের ঘটনা বিরল। এটি একটি জন্মগত সমস্যা যাহা সচরাচর ঘটে না। মেডিকেল বা ডাক্তারি পরিভাষায় এটা কে ফিটাস ইন ফিটু শিশু বলা হয়। সাধারণত প্রতি পাঁচ লাখ শিশুর জন্য এ ধরনের একটি শিশু পাওয়া যেতে পারে। সারা বিশ্বজুড়ে এ রকম ঘটনা ঘটেছে দুই শ’ এরও কম।

একটি শিশুর শরীরের ভেতর আরেকটি শিশুর অবস্থান এটা কিভাবে সম্ভব! এ বিষয়ে জানতে চাইলে শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং নবজাতক ও শিশু কিশোর বিশেষজ্ঞ সার্জন ডাক্তার শঙ্কর চন্দ্র দাস জানান, মায়ের পেটে যখন বাচ্চা আসে অর্থাৎ অতি শুরুতে ডিম্ব নিষিদ্ধ হবার পর কোষ বিভাজন হতে হতে সাধারণভাবে একটি বাচ্চার জন্ম হয়। কিন্তু কোষ বিভাজনের কোনো এক পর্যায়ে যদি কোষগুলো সমান দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায় তবে দুইটি জমজ বাচ্চার জন্ম হতে পারে। কিন্তু কোষগুলো অসমান দুই ভাগে ভাগ হলে বেশি কোষ যুক্ত ভাগ থেকে সাধারণত একটি সুস্থ পূর্ণাঙ্গ শিশুর জন্ম হয় এবং কম কোষযুক্ত ভাগ থেকে অপর একটি বাচ্চা বড় হতে শুরু করে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই বাচ্চাটির সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে তৈরি হয় না। এই বাচ্চাটি পরবর্তী সময়ে সুস্থ বাচ্চাটির শরীরের ভেতর ঢুকে পড়ে এবং বেঁচে থাকার জন্য সুস্থ বাচ্চাটির দেহ থেকে রক্তনালীর মাধ্যমে খাদ্য সংগ্রহ করে। এই দ্বিতীয় বাচ্চাটিকেই বলা হয় ফিটাস ইন ফিটু।

তিনি জানান, এই ফিটাস ইন ফিটু শিশুটির সাধারণত ব্রেন তৈরি হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মেরুদণ্ডের হাড় তৈরি হয়, ক্ষুদ্র আকারে হাত পা তৈরি হয় এবং অন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে তৈরি হয় না।

ডাক্তার শংকর চন্দ্র দাস আরো জানান, শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে এই ফিটাস ইন ফিটু শিশুটির অবস্থান হয় সুস্থ শিশুটির পেটের ভেতর। বাকি ২০ ভাগ ক্ষেত্রে শিশুটির অবস্থান হতে পারে বুকের ভেতর, তলপেটে, মাথার ভেতর, মুখের ভেতর, অণ্ডকোষের ঝুলির ভেতর অথবা পায়ুপথের পেছনে।

একসাথে এ ধরনের জমজ দুই শিশুকে প্যারাসাইটিক টুইন বলা হয়। এদের মধ্যে ফিটাস ইন ফিটু শিশুটি পূর্ণাঙ্গভাবে জন্ম না নিলেও শিশুর মধ্যে জীবনের অস্তিত্ব থাকে।

শনিবার হাসপাতালে অবস্থানরত শিশুটির বাবা ইমরান হোসেন সবুজ ও তার মা মরিয়ম আক্তারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গর্ভকালীন সময়ে তারা বিষয়টি বুঝতে পারেননি। সে সময় তারা স্থানীয় ক্লিনিকে গিয়ে আলট্রাসনোগ্রাম করালে তাদেরকে বলা হয় মেয়ে সন্তান জন্ম নিবে। কিন্তু গত ৬ জুন স্থানীয় মনিপুর বাজারের আল মদিনা হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশন করে শিশুটির জন্ম হয়। তখন তারা এ ঘটনাটি দেখতে পান। দেখে প্রথমে কিছুটা বিচলিত হলেও পরবর্তীতে একজন শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। ওই ডাক্তার তাদেরকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

কিন্তু গার্মেন্টস কর্মী দরিদ্র ইমরান শিশুটির অপারেশন করতে অনেক টাকা লাগবে মনে করে তার এক আত্মীয়ের পরামর্শে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডাক্তার শংকর চন্দ্র দাসের সাথে দেখা করে শিশুটি সার্বিক অবস্থা ও তাদের পারিবারিক অবস্থার কথা জানান। তখন ডাক্তার শংকর চন্দ্র দাস শিশুটি দেখে নিজ উদ্যোগে হাসপাতালের অন্য সার্জনদের সাথে পরামর্শ করে এই শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেন এবং এখানেই তার অপারেশনের যাবতীয় ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেন।

হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা প্রদান এবং অবজারভেশন করে পরবর্তীতে ঠিক করা হয় শনিবার অপারেশন করে ফিটাস ইন ফিটু শিশুকে আলাদা করা হবে। সে অনুযায়ী হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারসহ অন্য সবকিছু প্রস্তুত করে শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় তার অস্ত্রোপচার শুরু করা হয় এবং সাড়ে ১১টায় সফলভাবে শেষ হয়।

অস্ত্রোপচারে ডাক্তার শঙ্কর চন্দ্র দাসের সাথে হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ও শিশু সার্জারি বিভাগের সার্জন খাজা হাবিব সেলিম, সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার শামসুল হুদা, সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার মনিরুল ইসলাম, ডাক্তার মইনুল হোসেন চৌধুরীসহ ১০-১২ জন ডাক্তার, নার্স এবং ওটি বয় অংশ নেন।

অপারেশনের নেতৃত্বে থাকা ডাক্তার শঙ্কর চন্দ্র দাস ফিটাস ইন ফিটু শিশুটি সম্পর্কে বলেন, এই শিশুটির অবস্থান ছিল মূল শিশুটির পায়ুপথের পেছনে কোমরের সাথে সংযুক্ত। এর ব্রেন ছিল না এবং মেরুদণ্ড ছিল না। তবে একটি পা ছিল বড় আরেকটি পা ছিল ছোট আকারের। বেঁচে থাকার জন্য সুস্থ বাচ্চাটির দেহ থেকে রক্তনালীর মাধ্যমে খাদ্য সংগ্রহ করে এতদিন বেঁচে ছিল শিশুটি।

ডাক্তার শংকর চন্দ্র দাস আরো বলেন, আমাদের হাসপাতাল এমনকি বাংলাদেশে এ ঘটনাটি একটি বিরল ঘটনা। এর আগে একটি শিশুর মধ্যে আরেকটি শিশুর অপারেশন ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ ও সিলেট মেডিক্যাল কলেজে হয়েছিল। তাই আমরা আমাদের হাসপাতালের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও এ ধরনের একটি জটিল অপারেশন করতে আগ্রহী হই। আমরা সফলভাবে অপারেশনটি করতে সক্ষম হয়েছি।

শিশুটির বাবা সবুজ সফলভাবে অপারেশন করার জন্য সংশ্লিষ্ট ডাক্তারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

More News Of This Category

ফেসবুকে আমরা