নারায়ণগঞ্জ নাগরিক আন্দোলনের সভাপতি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি বলেছেন, সেনাবাহিনী যদি আন্তরিকভাবে দায়িত্ব নেয়, তাহলেই দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। তার মতে, বর্তমান বাস্তবতায় নির্বাচন কমিশন বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একক উদ্যোগে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা কঠিন।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
রফিউর রাব্বি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিশেষ করে সেনাবাহিনী যদি নির্বাচনকে নিজেদের দায়িত্ব হিসেবে নেয়, তাহলে কোনো পক্ষের অনিচ্ছা সত্ত্বেও নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতায় তিনি মনে করেন, সেনাবাহিনীর সেই সদিচ্ছার ঘাটতি রয়েছে। তিনি বলেন, সরকার বা নির্বাচন কমিশন চাইলেই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে—এমন আস্থা তার নেই। কারণ অতীতে কমিশনের ভূমিকা জনগণ দেখেছে।
তিনি আরও বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলের ভোটকেন্দ্রগুলোতে দায়িত্বপ্রাপ্ত আনসার সদস্যদের পক্ষে এককভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা কিছুটা হলেও কমবে।
নির্বাচনী সহিংসতা ও কেন্দ্র দখলের আশঙ্কা তুলে ধরে তিনি বলেন, কেন্দ্র দখলের সংস্কৃতি আমাদের সমাজে গেঁথে গেছে। লক্ষাধিক কেন্দ্র পাহারা দেওয়ার মতো সক্ষমতা পুলিশের নেই বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তার ভাষায়, এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে পুলিশ অনেক সময় দায়িত্ব পালনে অনীহা প্রকাশ করছে, এমনকি সেনাবাহিনীর অবস্থানও খুব স্পষ্ট নয়।
রফিউর রাব্বি বলেন, তিনি স্বভাবগতভাবে আশাবাদী মানুষ। তাই পুরো বিষয়টিকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টা করছেন। তবে বাস্তবতা হলো নির্বাচন কমিশন ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেকোনোভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে মরিয়া। এতে সংকট পুরোপুরি না কমলেও কিছুটা প্রশমিত হতে পারে। কিন্তু নির্বাচন যে সুষ্ঠু হবে, সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন।
নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করে তিনি বলেন, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ঘোষণার আগেই অনেক প্রার্থী প্রচারণা সামগ্রী সরানোর কথা থাকলেও বাস্তবে তা মানা হচ্ছে না। তফসিল ঘোষণার পর এসব বিষয় কমিশনের তত্ত্বাবধানে থাকার কথা থাকলেও তারা তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়নে ব্যর্থ হচ্ছে। এর ফলেই নির্বাচন আদৌ হবে কি না এমন সংশয় তৈরি হয়েছে।
সংবাদমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের ওপর হামলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এসব হামলার বিষয়ে আগেই সতর্কতা দেওয়া হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হলেও তারা কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এতে আসন্ন ফেব্রুয়ারির নির্বাচন কেমন হতে পারে, তারই ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
৯১ সালের নির্বাচনের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, সে সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গুরুত্বপূর্ণ ও নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেছিল বলেই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব হয়েছিল।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুজনের সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। জেলা সভাপতি ধীমান সাহা জুয়েলের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন অ্যাডভোকেট আবু বক্কর সিদ্দিক, অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান মাসুম, অ্যাডভোকেট আওলাদ হোসেন, ভবানী শংকর রায়, অসিত বরণ বিশ্বাস, ফজলুল হক রুমন রেজা ও আফজাল হোসেন পন্টি।
সভা সঞ্চালনা করেন সুজন নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. আশরাফুল হক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জামায়াত মনোনীত প্রার্থী মাওলানা মইনুদ্দিন আহমাদ, বাসদের সেলিম মাহমুদ ও এনসিপির আহমেদুর রহমান তনুসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।

















